ডিজিটাল মার্কেটিং-এর যুগে যেখানে টেক্সট এসএমএস এবং ইমেইল মার্কেটিং জনপ্রিয়, সেখানে গ্রাহকের কাছে ব্যক্তিগত স্পর্শ নিয়ে এসেছে ভয়েস এসএমএস মার্কেটিং বা ভয়েস কল মার্কেটিং। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ পদ্ধতি, যেখানে প্রাক-রেকর্ড করা ভয়েস বার্তাটি একযোগে হাজার হাজার মোবাইল এবং ল্যান্ডলাইন ফোনে বিতরণ করা হয়। বাংলাদেশে ব্যবসার প্রচার, নোটিফিকেশন প্রদান এবং গ্রাহক সম্পর্ক উন্নয়নে এই মাধ্যমটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

ভয়েস এসএমএস মার্কেটিং কী?

ভয়েস এসএমএস (Voice SMS) হলো একটি অডিও-ভিত্তিক যোগাযোগ কৌশল। এই পদ্ধতিতে, কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের প্রচারণামূলক বার্তা, অফার, জরুরি নোটিশ বা শুভেচ্ছা বার্তা একটি ভয়েস ফাইল হিসেবে রেকর্ড করে। এরপর একটি স্বয়ংক্রিয় প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সেই ফাইলটি টার্গেট করা গ্রাহকদের ফোন নম্বরে কল করে বাজিয়ে শোনায়। গ্রাহক যখন কলটি রিসিভ করেন, তখন তিনি সরাসরি রেকর্ড করা বার্তাটি শুনতে পান। ভয়েস এসএমএস-এর মূল উদ্দেশ্য হলো বার্তাটিকে আরও ব্যক্তিগত (Personal) এবং আকর্ষণীয় (Engaging) করে তোলা।

ভয়েস এসএমএস কেন টেক্সট এসএমএস থেকে আলাদা ও কার্যকর?

যদিও বাল্ক এসএমএস দ্রুত এবং কার্যকরী, তবুও ভয়েস এসএমএস কিছু বিশেষ সুবিধা দেয় যা এটিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে:
বৈশিষ্ট্য ভয়েস এসএমএস (Voice SMS) টেক্সট এসএমএস (Text SMS)
ব্যক্তিগত সংযোগ অত্যন্ত ব্যক্তিগত, স্বর এবং আবেগ ব্যবহার করে শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করা যায়। তুলনামূলকভাবে কম ব্যক্তিগত।
ভাষার সুবিধা নিরক্ষর বা যারা পড়তে স্বচ্ছন্দ নন, তাদের কাছেও বার্তা পৌঁছানো যায়। কেবল লিখিত বার্তা পড়তে পারা গ্রাহকদের জন্য কার্যকর।
বার্তার দৈর্ঘ্য দীর্ঘ বার্তা বা বিস্তৃত তথ্য সহজভাবে এবং দ্রুত বিতরণ করা যায়। অক্ষরের সংখ্যা সীমিত (সাধারণত ১৬০ বা তার কম)।
বিপনন ভয়েস টোনের মাধ্যমে ব্র্যান্ডের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করা যায়। কেবল নাম (মাস্কিং) বা টেক্সট ব্যবহার করে ব্র্যান্ডিং সীমিত।
তাৎক্ষণিক মনোযোগ ফোন বেজে উঠলে গ্রাহক দ্রুত মনোযোগ দেন এবং কল রিসিভ করার প্রবণতা বেশি থাকে। অনেক সময় মেসেজ ইনবক্সে না পড়েই পড়ে থাকে।

ভয়েস এসএমএস ব্যবহারের সুবিধা ও কার্যকারিতা

বাংলাদেশে ভয়েস এসএমএস মার্কেটিং ব্যবহার করে ব্যবসাগুলো নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো লাভ করতে পারে: ১. উচ্চ প্রতিক্রিয়ার হার (High Response Rate): একটি ফোন কল স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করে। প্রাক-রেকর্ড করা বার্তা শোনার পর গ্রাহকের নির্দিষ্ট নম্বর চেপে (যেমন: ১ চেপে আরও তথ্য জানতে বা অর্ডার দিতে) প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ থাকে, যা রেসপন্স রেট বৃদ্ধি করে। ২. ব্যাপক বাজার প্রবেশাধিকার (Wide Market Reach): বাংলাদেশে এখনো বহু মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না বা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। ভয়েস এসএমএস যেকোনো সাধারণ মোবাইল বা ল্যান্ডলাইন ফোনে পৌঁছাতে পারে, ফলে এটি একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম। ৩. জরুরি বা সংবেদনশীল যোগাযোগ: গুরুত্বপূর্ণ নোটিফিকেশন, জরুরি সতর্কতা (যেমন: বিদ্যুৎ বিভ্রাট, ব্যাংকের নিরাপত্তা সতর্কতা) অথবা ব্যক্তিগত রিমাইন্ডার (যেমন: ইএমআই পরিশোধের তারিখ) জানাতে ভয়েস কল একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। ৪. কম খরচে প্রচার: একবারে লক্ষ লক্ষ গ্রাহককে ম্যানুয়ালি কল করার তুলনায় স্বয়ংক্রিয় ভয়েস কল সিস্টেম অনেক সাশ্রয়ী। ৫. ক্যাম্পেইন ট্র্যাকিং ও অ্যানালিটিক্স: আধুনিক ভয়েস এসএমএস প্ল্যাটফর্মগুলোতে কল ট্র্যাকিং এবং রেকর্ডিং সুবিধা থাকে। কোন গ্রাহক কখন কল রিসিভ করলেন, কতক্ষণ বার্তা শুনলেন এবং কী প্রতিক্রিয়া দেখালেন—তার বিস্তারিত রিপোর্ট পাওয়া যায়, যা ভবিষ্যতের মার্কেটিং কৌশল নির্ধারণে সহায়ক।

ভয়েস এসএমএস-এর ব্যবহারিক ক্ষেত্র

  • নির্বাচনী প্রচারণা: রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বার্তা ও বক্তব্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: অভিভাবককে উপস্থিতি, বকেয়া ফি বা পরীক্ষার নোটিশ জানাতে।
  • স্বাস্থ্যসেবা: টিকাদান কর্মসূচি বা জরুরি স্বাস্থ্য বার্তা প্রচারে।
  • ইভেন্ট অর্গানাইজার: সভা, সেমিনার বা কনফারেন্সের আমন্ত্রণ ও রিমাইন্ডার দিতে।
  • ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স: লোন বা কিস্তিরReminder দিতে।

Leave A Comment

All fields marked with an asterisk (*) are required